Wheat Cultivation in 2024 : গম চাষ ও পদ্ধতি

Wheat Cultivation in Bangla : গম চাষ ও পদ্ধতি : গমের বিজ্ঞানসম্মত নাম ট্রিটিকাম ইস্টিভাম ( triticum aestivam ) । বিভিন্ন প্রজাতির গমের মধ্যে ট্রিটিকাম ডাইকক্কাম , ট্রিটিকাম স্ফিরোক্কাম , ট্রিটিকাম ডিউরাম প্রধান । এটি বিশেষত : উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোয় অঞ্চলের ব্যাপক বাণিজ্যিক কৃষির প্রধান ফসল । উত্তর গোলার্ধে 15 ° -65 ° আর দক্ষিণ গোলার্ধে 15 ° -45 ° অক্ষাংশ পর্যন্ত অঞ্চলের মধ্যে গম চাষের প্রাধান্য দেখা যায় ।

ব্যবহার : গম পৃথিবীর প্রধান খাদ্যশস্য । গম থেকে আটা , ময়দা , সুজি তৈরি হয় এবং তা দিয়ে কেক , পাউরুটি , বিস্কুট ছাড়াও শ্বেতসার , আঠা ইত্যাদিও তৈরি করা হয় । গম গাছের খড় কাগজ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয় ।

গমের শ্রেণিবিভাগ ( Classification of Wheat ):

বীজবপন ও ফসল সংগ্রহের সময় অনুসারে এবং আকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গমের শ্রেণিবিভাগ করা যায় বীজবপন ও ফসল সংগ্রহের সময় অনুসারে গমের শ্রেণিবিভাগ – 1 ) শীতকালীন গম 2 ) বাসন্তিক গম

১) শীতকালীন গম ( Winter Wheat ) : শীতকালীন গমের বীজ শীতের শুরুতে বোনা হয় । উত্তর গোলার্ধে সাধারণত নভেম্বর মাসে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এপ্রিল বা মে মাসে শীতকালীন গমের বীজ রোপণের কাজ শেষ করা হয় । গ্রীষ্মের উয়তায় গম পেকে যাওয়ার পর ফসল কাটা হয় । পৃথিবীর মধ্য অক্ষাংশের উয় নাতিশীতোয় এবং উপরাষ্ট্রীয় বলয়ের শীতকালীন আবহাওয়া গম চাষের পক্ষে উপযুক্ত । পৃথিবীর প্রায় 80 % গম শীতকালীন ‘ শ্রেণির ।

শীতকালীন গম চাষের বণ্টন :

a ) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পেডালফার ( Pedalfers ) মৃত্তিকা অঞ্চল ও উর্বর তৃণভূমি বলয়ের অন্তর্গত কনেসাস , মিসৌরি , নেব্রাস্কা প্রদেশে শীতকালীন গম চাষ করা হয় ।

b ) চিনের হোয়াংহো ব – দ্বীপ এবং উত্তর ও উত্তর – পশ্চিম ভাগে শীতকালীন গম চাষের প্রচলন আছে ।

c ) জাপানে 37 ° উত্তর অক্ষাংশের দক্ষিণে প্রধানত পূর্ব উপকূল বরাবর শীতকালীন গম চাষ করা হয়ে থাকে ।

d ) ভারতে রবিশসা হিসেবে গম চাষ করা হয় । উত্তরপ্রদেশ , মধ্যপ্রদেশ , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , রাজস্থান ইত্যাদি প্রদেশে গম প্রধানত শীতকালে উৎপন্ন হয় ।

e) এছাড়া আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়া , পাকিস্তান ও বাংলাদেশে শীতকালীন ফসল হিসেবে গমের চাষ হয় ।

২) বাসন্তিক গম ( Spring wheat ) : বাসস্তিক গমের বীজ বসন্তের শুরুতেই বোনা হয় । এই সময় দীর্ঘ শীতের শেষে বরফগলা জলে মাটি ভিজে থাকে । ফলে অলসেচের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে হ্রাস পায় । কার্যত পৃথিবীর যে – সমস্ত অঞ্চলে শীতকালে তুষারপাত হয় এবং মাটি চাষের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে , সেখানে কৃষির অন্যান্য উপাদান মজুত থাকলে বাসস্তিক গম শীতের শেষে চাষ করা যায় ।

বাসন্তিক গমচাষের বণ্টন :

( a ) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ও দক্ষিণ ডাকোটা , মনটানা , ওয়াইওমিং প্রভৃতি অঞ্চলে বাসম্ভিক গম চাষ করা হয় । বিশেষত , লোহিত নদীর ( Red river ) উপত্যকা বসন্তকালীন গমচাষের জন্য বিশেষ উপযুক্ত ।

 b ) কানাডার দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তীর্ণ প্রেইরি ( Prairie ) ক্ষেত্রে অর্থাৎ মানিটোবা , সাসকাচুয়ান ও আলবার্টা প্রদেশের সমতলভূমিতে বাসন্ধিক গমের চাষ হয় ।

c ) পূর্বর্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্লেপ তুলভূমি অঞ্চলে এবং সাইবেরিয়ার একটি বড়ো অঞ্চলে গম বসন্তকালীন ফসল । আকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গমের শ্রেণিবিভাগ : আলোচ্য প্রসঙ্গ অনুসারে , গম প্রধানত তিন প্রকার ।

যেমন- 1 ) সাদা গম , 2 ) ডুরাম গম ও 3 ) শক্ত লাল গম

সাদা গম ” ( White wheat ) : সাদা গম নরম জাতের হয় । শীত ও বসন্ত দুই ঋতুতেই এ জাতের গম চাষ করা যায় । এর দানাগুলি বড়ো ।

ডুরাম গম ( Durum wheat ) : ডুরাম গম কঠিন ফ্রাতের বসন্তকালীন গম । ভারতে বিশেষত দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলে ডুরাম গমের চাষ হয় । ডুরাম গমের ফানাগুলি মাঝারি থেকে বড়ো মাপের ।

শক্ত লাল গম ( Hard red wheat ) : শীত ও বসন্ত দুই ঋতুতেই শক্ত লাল গম চাষ করা যায় । এ – জাতীয় মের দানাগুলি ছোটো থেকে মাঝারি মাপের ।

ভৌগোলিক পরিবেশ: গম উৎপাদনের পক্ষে সাধারণত নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক অবস্থাগুলি অনুকূল –

1 ) উন্নতা: শুদ্ধ নাতিশীতোয় বা শীতপ্রধান আবহাওয়া গম চাষের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে । গম গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য 15-20 ° উন্নতার প্রয়োজন । বীজ বপনের পর অন্তত ছ’সপ্তাহ আবহাওয়া শীতল থাকা একান্ত প্রয়োজন । এই সময়ে 15 22 ° সে . গড় উন্নতা চাষের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে ।

 2 ) বৃষ্টিপাত্ত: গম অপেক্ষাকৃত শুষ্ক অঞ্চলের ফল । সেজন্য গম চাষে জ্বলের প্রয়োজন সীমিত । গড়ে বাৎসরিক 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত ও 110 টি তুহিনমুক্ত দিন গম চাষের অনুকূ ফুল ধরার সময় ও চতুর্থ শেষ দানা নবম থাকাকালীন প্রয়োগ করতে হয় ।

3 ) জলসেচ: সেচসেবিত এলাকায় গমের ভালো ফলনের জন্য প্রথম সেচ – বীজ বপনের তিন সপ্তাহ পরে , দ্বিতীয় সেচ বপনের ছ’সপ্তাহ পরে , তৃতীয় সেচ অম্লধর্মী দেশ , বেলে – দোআঁশ , পলি দোআঁশ মাটি গম চাষের উপযোগী । গাঢ়বাদামি মাটি , পাড়জল মাটি ,

4 ) মাটি : ‘ কুরমৃত্তিকা ‘ বা চারনোজেম ‘ মটি গম চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট ।

5) ভূমি: ভালো জল নিকাশির বন্দোবস্তযুক্ত প্রায়সমতল ভূমি বা অল্প ঢালু জমিতে গম চাষ করা হয়। পাহাড়ের খাড়া ঢালে, ধাপে কেটে গম চাষ করা হয়।

6) পরিবহন : পরিবহন ব্যবস্থার সুযোগ সুবিধা যুক্ত অঞ্চলে গম বাজারজাত করা সহজ।

Leave a Comment