Maize Cultivation West Bengal: ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ২০২৪ : ভুট্টা চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন ।

পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা বর্তমানে ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না , যার জন্য ভুট্টা চাষ করার পর খুব বেশি পরিমানে ফসল উৎপাদন করতে পারেন না । সঠিক পদ্ধতিতে এই চাষ করলে লাভের পরিমান দ্বিগুন করতে পারবে কৃষকবন্ধু । Maize Cultivation West Bengal.

আপনি যদি ভুট্টা চাষ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাহলে আমাদের এই প্রতিবেদনটি একটিবার পড়ে দেখুন ।

আজকে আমরা ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো ।

এই প্রতিবেদনটি পড়বার পর আপনি নিজেই এই ভুট্টা চাষ করতে পারবেন । এই নিয়ে কাউকে কিছু আর জিজ্ঞাসা করতে হবে আপনাকে। তাহলে চলুন ধাপে ধাপে ভুট্টা চাষের সম্পর্কে জানি ।

ভুট্টা চাষ পদ্ধতি – বীজ থেকে জমি তৈরী, সেচ থেকে ভুট্টা সংগ্রহ জানুন 

যে কোনো ফসলের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে, ঠিক ভুট্টা চাষের একটি সময় রয়েছে যদিও ভুট্টা প্রায় সারা বছরই চাষ হয়ে থাকে । কিন্তু আজকে আমরা শীতকালীন অর্থাৎ কার্তিকমাস থেকে অগ্রান মাসের সময়কালের ভুট্টা চাষ সম্পর্কে আলোচনা করবো ।

পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা এই শীতকালীন ভুট্টা চাষ টি বেশি করে থাকেন । এই মুহূর্তে কম পরিশ্রম এ সবথেকে ভালো এবং লাভজনক ফসল হলো ভুট্টা । এই ভুট্টার বাজার চাহিদা এবং মূল্য খুবেই ভালো । 

এই কারণেই কৃষকরা এখন ভুট্টা চাষ বেশি পরিমানে করে থাকেন । কৃষিকাজে আধুনিকতার ফলে এখন ভুট্টা ভাঙ্গানো মেশিন দ্বারা বিনা পরিশ্রমে কৃষকরা এই চাষ করতেছেন ।

ভুট্টা চাষের পদ্ধতি গুলি 

ভুট্টা চাষের জন্য ভালো হাইব্রিড বীজ কেনা, জমি তৈরী, সার প্রয়োগ, বীজ বপন, জল সেচ এবং ফসল সংগ্রহ – ইত্যাদি পদ্ধতিগুলি সঠিক ভাবে করলে অধিক ফসল ফোলানো সম্ভব । তাই, নিচের বলা পদ্ধতিগুলি অনুরণন করতে পারেন ।

১) ভুট্টা বীজ ক্রয় ও শোধন  : যেহুতু ভুট্টা যত বেশি হবে তত আমাদের ভালো তাই ভুট্টা বীজটি সবথেকে ভালো কোয়ালিটির প্রয়োজন। তাই ,সেরা হাইব্রিট ভুট্টা বীজ বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে । এবারে বীজ শোধনের জন্য বাজারে যে কোনো ভালো বীজ শোধন দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে ।

ভুট্টা বীজ লাগানোর জন্য দুরুত্ব – সারি থেকে সারির দুরুত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং বীজ থেকে বীজের দুরুত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিটার । মাটির গভীরতা ২-৩ সেন্টিমিটার ।

২) জমি তৈরী : ভুট্টা চাষাবাদ করার জন্য সবথেকে উপযুক্ত জমি হলো – বেলে-দোয়াস মাটি । এই চাষের জন্য জমি তৈরী খুবেই গুরুত্বপূর্ণ কেননা সঠিক জমি তৈরী হলে ফসল ভালো হবে ।

এই জমি তৈরির সময় চুন এবং ব্লিসিং পাউডার দিয়ে জমি শোধন করে নিতে পারেন (প্রতি একর প্রতি ৫০ কেজি চুন ২ কেজি ব্লিসিং ) একবার জমি শোধন করলে পরবর্তী ৩-৪ বছর না করলেও হবে জমি শোধন ।

ভুট্টা চাষের জন্য অন্তত ৪-৫টা চাষ দিতে হয় । প্রথম চাষ দিতে হবে বড়ো ফাল দিয়ে একটি চাষ, তারপর অন্তত ২-৩ দিন পর দ্বিতীয় চাষ এ ছোট ফাল দিয়ে একটি চাষ এবং তৃতীয় চাষ এ ১-২ টি ছোট ফালের চাষ দিয়ে জমিটি উর্বর করে নিতে হবে । এই চাষের সময় আপাদের সার দিতে হবে যা নিচে আমরা বলে রেখেছি ।

৩) সার প্রয়োগের পরিমান : ভুট্টা হলো খাদক ফসল তাই ভুট্টা গাছের খাবারের পরিমানের উপর নির্ভর করবে ভুট্টা গাছের ফসল । ভুট্টা চাষের জন্য জমি তৈরির সময় সার প্রয়োগ করতে হয় এবং সেচ এর সময় সার প্রয়োগ করতে হয় । নিচে সঠিক ভাবে বলা হলো ।

জমি তৈরির সময় সার প্রয়োগ প্রতি ৩৩ শতক অনুযাযী সারের পরিমান : 

জৈব সার (গোবর সার/ ফিড সার )১০ বস্তা 
পটাস ২০ কেজি
উড়িয়া ২০ কেজি 
ডিএসপি ২০ কেজি 
মিশ্র সার ১০-১৫ কেজি 

জল সেচ পদ্ধতি ও সারের পরিমান (প্রতি ৩৩ শতক এ ): 

অধিক ভুট্টা ফোলানোর জন্য অন্তত ৩-৪ বার জল সেচ প্রয়োজন । যদি আপনার জমি বেশি শুস্ক প্রকৃতির হয় তাহলে ৪ বার সেচ দিবেন নাইলে ৩ বার । 

জল সেচ দেবার সময় রাসায়ানিক সার প্রয়োগ করতে হবে সেই পরিমান নিচে বলা হলো । প্রতি ৩৩ শতক অনুযাযী কখন ও কি পরিমানে সার প্রয়োগ করবেন ।

ভুট্টা গাছ

ভুট্টা চাষে জল সেচ পদ্ধতি সার ও পরিমান 
প্রথম সেচ (ভুট্টা গাছ ৪-৬পাতা যখন )উড়িয়া ১৫ কেজি, ডিএপি ২০ কেজি , ম্যাগনেশিয়াম ২-৩ কেজি ।
দ্বিতীয় চাষ (ভুট্টা গাছ যখন ১০-১২ পাতা )উড়িয়া ১৫ কেজি, ডিএপি ২০ কেজি , ম্যাগনেশিয়াম ২-৩ কেজি ।
তৃতীয় সেচ (ভুট্টা গাছ যখন ১৫-১৭ পাতা )উড়িয়া ১৫ কেজি, ডিএপি ২০ কেজি , পটাস ১৫-২০ কেজি , ম্যাগনেশিয়াম ২-৩ কেজি ।

৪) ভুট্টা সংগ্রহ পদ্ধতি : ভুট্টা গাছের ফল সঠিক ভাবে পরিপুষ্ট হওয়ার পর অর্থাৎ যখন দেখতে পারবেন যেখান থেকে ভুট্টা কলা বের হয়েছে সেখানে পাতাগুলি শুখিয়ে যাচ্ছে তখন বা একটি ভুট্টা কলা থেকে খোসাগুলি খুলে দেখবেন লালচে রং হয়েছে কি না যদি বুজতে পারেন মোচার ভুট্টাগুলো সঠিক পরিপক্ক হয়ে গেছে । তখন ভুট্টা গাছের মাথাটাই কেটে দিবেন এবং ২-৩ দিন পর ভুট্টা কলাগুলি বা মোচাগুলি ভেঙ্গে দিবেন ও গাছের মধ্যেই যেন ঝুলে থাকে একদম ছিড়ে ফেলবেন না ।

এর পর আরো ৫-৭ দিন পর তা ছিড়ে বাড়ি নিয়ে আসবেন ।

ভুট্টা চাষের জন্য কিছু পরামর্শ :

*যদি পাখির উপদ্রপ থাকে তাহলে বীজ লাগানোর সময় সালফার বীজে মিশিয়ে ২০-২৫ মিনিট পর লাগাবেন তাহলে পাখি বা পোকায় বীজ খেতে পারবে না ।

*অনেক সময় ভুট্টা গাছ গজানোর পর রাতে এক ধরণের পোকা ভুট্টা গাছ কেটে দেয় এর জন্য যে কোনো দোকান থেকে কাটোই পোকার জন কীটনাশক এনে জমির উপরে এস্প্ৰ করে দিবেন ।

Leave a Comment