Blue Revolution 2024: নীল বিপ্লব কাকে বলে ? নীল বিপ্লবের সুফল | নীল বিপ্লবের কুফল | আজকে এই পোস্ট এ আমরা নীল বিপ্লব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করছি ।
নীল বিপ্লব কাকে বলে ? What is Blue Revolution
সূচনা: “নীল বিপ্লব” হল জলসম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা যার দ্বারা মানুষের পানীয় জলের ও কৃষির প্রয়োজনীয় জলের জোগান সুনিশ্চিত করা সম্ভব । টোকিওতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিশ্ব জলমঞ্চ( Third World Water Forum ) আলোচনাকালীন এই ‘ নীলবিপ্লব ‘ শব্দটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । কারণ জাতিসংঘের ( United Nations ) একটি সমীক্ষা থেকে আশঙ্কা করা হয় 2025 সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় 2.7 বিলিয়ন মানুষ এক তীব্র পানীয় জল সংকটের সম্মুখীন হবে । তাই বিশ্বকে আগত এই জল সংকটের হার থেকে মুক্ত করার উদ্যেশ্যেই‘ নীলবিপ্লব ‘ সংঘটিত হন ।
ভারতে নীলবিপ্লব ‘ বলতে বোঝায় পুকুর বা বিভিন্ন ছোটো ছোটো জলাশয়গুলি মাছ এবং উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সামুদ্রিত প্রাণীর উৎপাদন বৃদ্ধিকে । ভারতে নীলবিপ্লব সংঘটিত হয় ড : অরুপ বৃন্মনন এর নেতৃত্বে । তাই তাকে ‘ নীলবিপ্লবের জনক ’ও বলা হয় ।
নীল বিপ্লবের সুফল :
- খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান : বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মাছ খাদ্য হিসাবে গণ্য হয় । বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অন্যান্য খাদ্যের সঙ্গে মাছের চাহিলও বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাই এই ক্রমবর্ধমান মাছের চাহিদা মেটানোর জন্য ‘ নীল বিপ্লবের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি তথা খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে । স্বাধীনতার 50 বছর আগে মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লক্ষ টন কিন্তু বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে 5 মিলিয়ন টন ।
- পুষ্টি সুরক্ষা প্রদান: সুলভ প্রাণণক প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের উৎস হিসাবে মাছ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । মাছ থেকে ভিটামিন D ও আয়োডিন পাওয়া যায় । মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় সুলভে মাছ পাওয়া যায় ।
- কর্মসংস্থান : মাছ চাষ , মাছ শিকার প্রভৃতি বহুবিধ কাজের সালো ভারতের প্রায় 14 মিলিয়ন মানুষ যুক্ত আছে । তাই বলা যায় যে নীল বিপ্লবের দ্বারা বহু মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে ।
- বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন: ভারতের যুক্ত মাছের প্রায় 20 শতাংশ বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় । 2010-11 সালে ভারত থেকে প্রায় 2.84 বিলিয়ন ডলারের মাছ ( 8.23 লক্ষ টন ) এবং অন্যান্য মাহাত সামগ্রী রপ্তানি করা হয়েছিল ।
নীল বিপ্লবের কুফল
- অসংখ্য উপকূলবাসী এই নীল বিপ্লবের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।
- মৎস্য চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ওষুধ ইত্যাদি স্থানীয় পুকুর , জলাশয়গুলি এবং বিভিন্ন স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । এগুলি বিভিন্ন রোগের উৎস ।
- স্থানীয় উদ্ভিদের মধ্যে জৈব পদার্থের সঞ্চয় দেখা যায় । এছাড়া এ সব কার্যকলাপের ফলে ইউট্রোফিকেশান দেখা যায় । যার ফলে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ।
- উপকূলবর্তী এলাকার ম্যানগ্রোভ অরণ্য অঞ্চল ও জলাভূমিগুলিতে চিংড়ি চাষের ফলে উপকূলভাগ ক্ষয়ের সম্মুখীন হয় । ভূমিক্ষয় ও অরণা ধ্বংসের ফলে বন্যা এবং ঝড়ের দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পায় । এছাড়া নদী বিন্যাসও পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে । লবণার জল প্রবেশ করার ফলে বহু অলক ও লজ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায় ।
- বাণিজ্যিক মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে মাছের কোনো মারণ রোগ দেখা দিলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে । এই সকল মারণ রোগ শুধুমাত্র মৎস্য চাষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই নয় উপরস্তু আশেপাশের বন্য প্রজাতিকেও বিলুপ্ত করে দেয়া । ফলে সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রে এর এক বিরূপ প্রভাব পড়ে।